Sobujbangla.com | সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে
News Head

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে

  |  ১৯:৪৪, জুলাই ১৮, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৭৫-পরবর্তী সময়ের শাসকরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। তাঁর সরকার এই নদী এবং খাল পুনর্খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০১৮ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৮-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বনের দস্যুতা দূর করার জন্য আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের পুনর্বাসন এবং বনের অপরাধ দমনের উদ্যোগের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য সহব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প আয়েরও ব্যবস্থা করেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ মহসিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পরিবেশ পদক-২০১৮-এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদক ও চেক বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং আমাদের গর্ব রয়েলে বেঙ্গল টাইগারের ব্রিডিং পয়েন্ট উন্নত করা এবং এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাতে সুরক্ষিত হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
’৯৬ সালে সরকারে এসেই ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পানি চুক্তি করার পর আমরা সুন্দরবনের গড়াই নদী খননের কাজ শুরু করি।
গড়াই নদী খননের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ততা দূর হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই লবণাক্ততা দূর করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। কারণ, এই গড়াই নদীর হোগলা বন এলাকাটিই বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট। গড়াই, সালনাসহ সুন্দরবনের নদীগুলো খননের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মিঠা পানির স্রোত যত বেশি হবে, জলের লবণাক্ততা ততই কমে আসবে। সে জন্যই এই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জাতির পিতার ঘাসিয়ার খাল খননের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলটি বন্ধ করে পরবর্তীকালে ক্ষমতায় আসা শাসকরা সেখানে চিংড়ি চাষের প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে জীববৈচিত্র্যের জন্য সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ডলফিনের আবাসস্থল সালনা নদীতে জাহাজ চলাচল শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাসিয়ার খালের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় আড়াইশ ছোট ছোট খাল বন্ধ করে শুরু করা চিংড়ি চাষ বন্ধ করে চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারে তাঁর সরকারকে বেগ পেতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একে একে প্রায় সব খালের মুখ আমরা খুলে দিয়েছি। যেগুলোর মধ্যে ৮০টা এখনো বাকি আছে এবং ঘাসিয়ার খাল পুনর্খনন করে সেখান দিয়েই জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। তা না হলে জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত ১৪-১৫ কিলোমিটার ঘুরে সালনা নদী দিয়ে আসতে হতো। এখন খুব সহজেই জাহাজগুলো মোংলা বন্দরে চলে আসতে পারছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ‘সরকার বদল হলে, পরবর্তী সরকারের ভেতর যদি এই সচেতনতা না থাকে যে কীভাবে দেশকে সুরক্ষিত করতে পারি বা দেশের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি, তাহলে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা ’৭৫-এর পরে ক্ষমতায় এসেছিল, তাঁদের কাছে চিংড়ি চাষ করে পয়সা বানানোটাই সবচেয়ে বড় ছিল। কিন্তু পরিবেশ বিনষ্ট হবে, জীববৈচিত্র্যের সমস্যা হবে, সেটা তারা কোনোদিনও ভাবেন নাই।
‘তাদের এ ব্যাপারে কোনো সচেতনতা ছিল বলেও মনে হয় না বা তারা দেশটাকেই হয়তো তারা ভালোভাবে চেনে না,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগকে এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের পরিবেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন, দেশের অর্থনৈতিক এবং সার্বিক উন্নয়নের দিকেই দৃষ্টি দেওয়া হয়। ‘যে কারণেই সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় এই কাজগুলো করা হয়েছে এবং আমাদের পরিবেশের সুরক্ষা কার্যক্রমও এখন যথেষ্ট অগ্রগামী,’ বলেন শেখ হাসিনা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ