Sobujbangla.com | এইচএসসিতে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই
News Head

এইচএসসিতে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই

  |  ০৬:৪১, মে ১১, ২০১৭

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে দুই লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকে আবেদন করতে গিয়ে সার্ভার সমস্যায় পড়ছেন। আবার কেউ কেউ মোবাইলে এসএমএস পাঠালে ফিরতি উত্তর পাচ্ছেন না। তবে এক্ষেত্রে কেউ কেউ সফল হচ্ছেন, আবার কারও আবেদন অসম্পূর্ণ রয়ে যাচ্ছে। ফলে আবেদন অসম্পূর্ণ থাকায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তবে এ বিষয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন আন্তঃজেলা শিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. আশফাকুস সালেহীন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আবেদনের ক্ষেত্রে বুয়েটের সার্ভার ব্যবহার করছি। কিন্তু টাকা জমা হচ্ছে টেলিটকের মাধ্যমে। টাকা জমার ইনফরমেশনটা আসতে একটু সময় লাগে। ফলে ট্রানজেকশনে কিছু সময় লাগছে। এক্ষেত্রে বড় জোর এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরি হতে পারে। তবে আবেদনে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা বুধবার রাতেই এ বিষয়ে টেলিটকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

অভিভাবক ফোরামের সভাতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসছে। তবে গতবারের তুলনায় এটা অনেকাংশে কম। আবেদনের সময় মাত্র দুইদিন গেছে। হয়তো আরো কয়েকদিন গেলে বুঝা যাবে অবস্থা কি দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, যে কোনো সমস্যা একবারে সমাধান হবে না। এবার নতুন ভর্তি পদ্ধতির কারণে এ যুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অর্থ ব্যয় কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করছি। এর জন্য সরকার বা সংশ্লিষ্টদের সুযোগ দিতে হবে। গতবার আবেদনের শুরু থেকে যে পরিমাণ অভিযোগ পাওয়া গেছে এবার সেটি আগের তুলনায় অনেক কম।

ড. মো. আশফাকুস সালেহীন বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আসছে আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। ভর্তিচ্ছুদের আবেদনের মধ্যে নানা ত্রুটি ধরা পড়ছে। তবে পরবর্তীতে তা পাঁচবার সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, একটি টেলিটক নম্বর দিয়ে একাধিক আবেদন করা যাবে, তবে যোগাযোগের নম্বর একাধিক আবেদনে ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া কলেজ নির্বাচন হলেও টাকা জমা না হলে সে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে পুনরায় তাকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে।

গত মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে একাদশ শ্রেণির ভর্তি আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার পর্যন্ত আবেদন পড়েছে প্রায় দুই লাখ। আবেদনের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ মে। গত রোববার ২০১৭-১৮ সালের ভর্তি নীতিমালা জারির মাধ্যমে ভর্তির সময় নির্ধারণ করা হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের স্কোরের ওপর ভিত্তি করে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করার সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির জন্য একটি কলেজ বাছাই করে দেবে শিক্ষা বোর্ড। ভর্তির জন্য আবেদন সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। আর নির্বাচিত কলেজে ভর্তি শুরু হবে আগামী ২০ জুন থেকে। ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই।

জানা যায়, ভর্তি নীতিমালায় প্রশাসনিক এলাকাভিত্তিক ভর্তি ফি সেশন চার্জসহ সর্বসাকল্যে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নীতিমালার বাইরে বেশি টাকা নেওয়া হলে, সেসব প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে শিক্ষা প্রশাসন। ১৮৪টি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে কলেজে আসন সংকটের নানা খবরে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে পাস করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। ভালো মানের কলেজের সংখ্যা কম হওয়ায় মেধাবীরা কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে ঠিকই, কিন্তু আসন-সংকটের কারণে কেউ সুযোগ বঞ্চিত হবে না।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থী। একাদশ শ্রেণিতে দেশের আট হাজারেরও বেশি কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। ফলে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে আসনের কোনো সংকট না থাকলেও অভাব মানসম্মত কলেজের। মানহীন কলেজের ভিড়ে সংকটে রয়েছে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা। এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও ভালো কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা নেই। ফলাফলের আনন্দের মধ্যেও অভিভাবকদের এখন একটাই দুশ্চিন্তা, তার সন্তানকে একটি ভালো কলেজে ভর্তি করাতে পারবেন তো?

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের আট হাজার ৮৬৪টি কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা ২০০-এর বেশি হবে না। এতে আসন সংখ্যা লক্ষাধিক। আর দেশে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৩৩৫টি। এতে একাদশ শ্রেণির আসন সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। যদিও সব সরকারি কলেজও মানসম্মত নয়। উপজেলা পর্যায়ের অনেক সরকারি কলেজেও শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ তুলনামূলক কম। আর ঢাকা মহানগরীতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য কলেজের সংখ্যা ২১০টি। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টি। তাতে আসন আছে প্রায় ২০ হাজার।

ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়, সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা এবং টেলিটকে ১২০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করবে, সেখান থেকে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

অনলাইনের জন্য www.xiclassadmission.gov.bd ঠিকানায় এবং টেলিটক থেকে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

কলেজে ভর্তির জন্য প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ৫ জুন। এরপর আরও দুই দফায় আবেদন গ্রহণ করে নির্ধারিত সময়ে ভর্তির কাজ শেষ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৮টি সাধারণ বোর্ড, একটি মাদ্রাসা ও একটি কারিগরি বোর্ডসহ মোট ১০ বোর্ডের অধীনে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন পাস করেছে। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ